এ বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিপরীক্ষা দিতে আসা এক শিক্ষার্থীর কাছে জানতে চেয়েছিলাম সে কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে। শিক্ষার্থীটি জানিয়েছিল, মেডিকেল, বুয়েটসহ প্রায় সব শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ইউনিট বা অনুষদের পরীক্ষার ফরম সে তুলেছে। তবে ওই আলাপচারিতার সময়ে, শেষ পর্যন্ত কয়টিতে সে পরীক্ষা দিতে পারবে তা নিয়ে সন্দিহান ছিল। সন্দেহের কারণ তখনকার রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং প্রচণ্ড ছোটাছুটি ও টেনশন। পছন্দের উপরের সারিতে থাকা কোনো একটিতে হয়ে গেলে বাকিগুলোতে আর পরীক্ষা না-ও দিতে পারে বলে জানিয়েছিল সে। শেষ পর্যন্ত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সে ভর্তি হতে পেরেছে, যেটি তার পছন্দের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল।
এত ফরম কেনার কারণ জানতে চাইলে সে জানিয়েছিল, কোথায় টিকবে বা না টিকবে সেই নিশ্চয়তা যেহেতু নেই, সুতরাং অনেকগুলো কেনাই ভালো। যেদিন আমরা এটা নিয়ে কথা বলছিলাম, সেদিনই সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়ে রাজশাহী এসেছে। ঠিক দুদিন পর থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা– একাধিক অনুষদে। হরতালের কারণে রাজশাহীতে সে সময় পরীক্ষাগুলো আর হয়নি। এরও প্রায় বিশ-বাইশ দিন পর রাজশাহীতে সে পরীক্ষা দিয়ে গেছে আরও লাখ লাখ সহপাঠীর সঙ্গে।
যার সঙ্গে কথা হচ্ছিল এসএসসি ও এইচএসসি দুটোতেই তার ভালো ফল। কিছুক্ষণ কথা বলে পঠিত বিভিন্ন বিষয়ে তার বেসিক ভালো বলে মনে হল। ইচ্ছাকৃতভাবে এইচএসসিতে পড়ে আসা বিষয়গুলো থেকে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছিলাম; বিশেষত ‘সৃজনশীল’ ধরনের প্রশ্ন। সবগুলোতেই সে ভালোভাবে উতরে গেল। এ মানের শিক্ষার্থীর ভর্তিপরীক্ষা সাধারণত খারাপ হওয়ার কথা নয়। তারপরও সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায়নি, যেটি তার পছন্দের শীর্ষে ছিল। কেন পেল না?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিপরীক্ষায় কতজন শিক্ষার্থী অংশ নেয় এবং তাদের মধ্যে পাশ করে কতজন, তার একটি তুলনামূলক চিত্র দেখেছিলাম গত বছর। এক কথায় ভয়াবহ! ইউনিটভেদে মাত্র আট থেকে ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থী পাশ করেছিল সে বছর। এখানে কিন্তু পরীক্ষায় টিকে যাওয়া বা ওয়েটিং লিস্টে থাকার কথা বলা হচ্ছে না, ন্যূনতম নম্বর পেয়ে পাশ করার কথা বলা হচ্ছে। তার মানে, প্রায় ৮৫-৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী ফেল করছে বা পাশ করার ন্যূনতম নম্বরটি অর্জন করতে পারছে না!
এবারের চিত্রও তাই। ঢাবির ঘ-ইউনিটে পরীক্ষা দিয়েছে ৭০ হাজারের মতো এবং পাশ করেছে আট হাজারের কিছু বেশি। খ-ইউনিটে প্রায় ৩৬ হাজার পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে প্রায় পাঁচ হাজার। বাকিরা ‘ফেল’ করেছে। এ অবস্থা একটিমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের। বাকিগুলোর অবস্থাও সে রকমই। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ই’ ইউনিটে পাশের হার ১১.৫ শতাংশ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘এ’ ইউনিটে ২১ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থীর মধ্যে ভর্তিপরীক্ষায় ইংরেজিতে ন্যূনতম ২২ নম্বর পেয়েছে মাত্র ২৫ জন, যেখানে শুধু ইংরেজি বিষয়ে ভর্তির আসন সংখ্যা ১০০।
ভর্তিপরীক্ষার এই ভয়াবহ চিত্র কী মেসেজ দেয় আমাদের? এসএসসি ও এইচএসসিতে যারা সর্বোচ্চ জিপিএ অর্জন করছে, তাদেরই একটি বড় অংশ ভর্তিপরীক্ষায় ফেল করছে। দু ধরনের পরীক্ষাতে একেবারে বিপরীতধর্মী ফলাফল প্রদর্শন করছে শিক্ষার্থীরা। ভর্তিপরীক্ষার ফলাফল বিবেচনায় নিলে প্রশ্ন করতে হয়, যারা ফেল করেছে তারা কি ‘মেধাহীন’? নাকি আমাদের প্রচলিত ভর্তিপরীক্ষা তাদের যথাযথ মূল্যায়নে অপারগ?
এসএসসি ও এইচএসসির মতো বড় আঙ্গিকের দুটো পরীক্ষায় উতরানোর পর ভর্তিপরীক্ষার আদৌ প্রয়োজন আছে কিনা– বিতর্কটি আগে থেকেই ছিল। এখন তা জোরেশোরে উঠছে। বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীর অবস্থান ভর্তিপরীক্ষার বিপক্ষে। এসএসসি ও এইচএসসির মতো বড় দুটো পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদেরকে যেভাবে বড় সিলেবাসের পরিসরে যাচাই করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ঘণ্টার ভর্তিপরীক্ষা কি সেই তুলনায় শিক্ষার্থীদের আরও ভালোভাবে যাচাই করতে সক্ষম? ধারণা করা যায়, এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় সর্বোচ্চ জিপিএ পেয়েছে, এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা হাজার বিশেকের বেশি হবে। ফল বিচারে এরা সর্বোচ্চ পর্যায়ের মেধাবী। তাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ একাধিক বড় আঙ্গিকের পরীক্ষায় সুপার্ব রেজাল্ট করেও আরেকটি এক ঘণ্টার পরীক্ষায় কেন ফেল করছে?
সাম্প্রতিককালে জিপিএ-র ভিত্তিতে ভালো রেজাল্ট করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়, মূল্যায়ন পদ্ধতি বদলে গেছে। আগেকার মতো শিক্ষকরা এখন নিজেদের হাতে নম্বর রেখে দেন না; ঠিকমতো লিখতে পারলে পূর্ণাঙ্গ নম্বর দেওয়া হয়। বিষয়টি কিছুটা ঠিক। কারণ সৃজনশীল পদ্ধতিতে লেখাপড়ার নতুন ধারা চালু হয়েছে দেশে। একেক শিক্ষার্থীর সৃজনশীলতা একেক রকম। সুতরাং কোনো স্ট্যান্ডার্ড উত্তর ভিত্তি করে শিক্ষকরা নম্বর দেবেন– আগেকার সেই পদ্ধতি এখন বর্জনীয়। বাংলা, সমাজ ইত্যাদি বিষয়ে আগে লেটার মার্ক পাওয়া শিক্ষার্থী ছিল দুর্লভ। এখন এসব বিষয়েও শিক্ষার্থীরা ৮০ শতাংশের বেশি নম্বর পাচ্ছে। লিখতে পারছে বলেই পাচ্ছে।
শিক্ষকরাও উপলব্ধি করছেন, নম্বর কম দেওয়ায় কৃতিত্ব নেই। বরং শিক্ষার্থীর উত্তর যা দাবি করে, সেই নম্বর দেওয়াই যথাযোগ্য মূল্যায়ন। শিক্ষার্থী কী জানে না, তা যাচাই করার চেয়ে তারা কী জানে তা যাচাই করাই সর্বোত্তম মূল্যায়ন পদ্ধতি। তবে এ ধরনের মূল্যায়ন পদ্ধতির যথাযথ প্রয়োগ কঠিনও বটে। তাই কিছুটা শঙ্কিত মনে প্রশ্ন রাখা যায়, শিক্ষকরা কি সৃজনশীল প্রশ্নে শিক্ষার্থীদের যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে পারছেন? মূল্যায়ন করতে গিয়ে অবমূল্যায়ন বা অতিমূল্যায়ন হচ্ছে না তো?
এ উত্তরগুলো প্রথমেই জানা জরুরি; না হলে পরবর্তী প্রশ্নে যাওয়া যাবে না। যদি এসএসসি ও এইচএসসির মূল্যায়ন যথাযথ হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের যেভাবে মূল্যায়ন করা হয়, তাতে কোনো গণ্ডগোল রয়েছে। আর না হলে বুঝতে হবে এসএসসি ও এইচএসসিতে সঠিক মূল্যায়ন হচ্ছে না। যেহেতু দুই পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা দু ধরনের রেজাল্ট করছে, সুতরাং সমস্যা কোনটাতে– তা জরুরিভিত্তিতে জানা দরকার। একইসঙ্গে একজন শিক্ষার্থী একজায়গায় মেধাবী, আরেক জায়গায় ‘অ-মেধাবী’ হতে পারে না নিশ্চয়ই!
মেডিকেল বা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা আলাদাভাবে পরীক্ষা হয়; বিশ্ববিদ্যালয়ে হয় আরেক ধরনের পরীক্ষা। তিন প্রকারের উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য কমপক্ষে তিন ধরনের প্রস্তুতি নিতে হয়। একটিতে খারাপ এবং অন্যটিতে ভালো করলে ধরে নেওয়া যায়, শিক্ষার্থী যেটিতে খারাপ করেছে সেটির জন্য সে উপযুক্ত নয়। কিন্তু শিক্ষার্থী যখন এক বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বিষয়ে চান্স পায়, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার ওই একই বিষয়ে ফেল করে, তখন তাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব?
এমন তো নয় যে, দুটো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপরীক্ষার প্রশ্নের মানের ফারাক আকাশ-পাতাল! এমন অনেক উদাহরণ আছে যেখানে শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়ে চান্স পেয়েছে, কিন্তু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পায়নি; আবার শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পেলেও চান্স পায়নি জাহাঙ্গীরনগরে। এসব ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর ঘাটতিটা কোথায়, তা জানা জরুরি। পরীক্ষা-পদ্ধতির ঘাটতিটাও বের করা দ্রুত প্রয়োজন।
দেখা যাচ্ছে, শিক্ষার্থী একই কিন্তু পরীক্ষা এবং পরীক্ষার স্থানভেদে তাদের রেজাল্ট ভিন্ন। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পাওয়া বা ‘ফেল’ করার কারণে শিক্ষার্থীদের যদি পরিবার, বন্ধুবান্ধব কিংবা অন্যদের কাছ থেকে ‘অ-মেধাবী’ বা ‘মেধাহীন’-জাতীয় অভিধা শুনতে হয়, তাহলে তাদের প্রতি অবিচার করা হবে। কিন্তু বাস্তবতা হল, চান্স না পাওয়া শিক্ষার্থীদের এসব কথা শুনতেই হয়। যদি তারা সত্যিকার অর্থেই মেধাহীন হয়, তাহলে কোনো পর্যায়ের পরীক্ষাতেই উতরানোর কথা নয়। যেহেতু উতরিয়েছে, সুতরাং তাদের মেধা নিয়ে প্রশ্ন থাকাটা উচিত নয়।
এই জায়গায় একটি দ্বান্দ্বিক অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে; প্রশ্ন উঠছে শিক্ষার্থীদের মেধা নিয়ে এবং একই সঙ্গে মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে। এর একটি বড় কারণ হতে পারে সাম্প্রতিক সময়ের ভালো রেজাল্টের অস্বাভাবিক স্ফীতি। প্রকৃতির নিয়মে দেখা যায়– খুব ভালো জিনিস কম, খুব খারাপ জিনিসও কম; মাঝামাঝি পর্যায়ের জিনিসই বেশি। সাম্প্রতিক রেজাল্ট কিন্তু উল্টো চিত্রই তুলে ধরছে। এসএসসি ও এইচএসসিতে এখন অধিকাংশই ভালো বা খুব ভালো শিক্ষার্থী, মাঝামাঝি বা খারাপের দিকে কম সংখ্যকেরই অবস্থান। আমরা অবশ্যই চাই, প্রতিটি শিক্ষার্থী পূর্ণ সক্ষমতা নিয়ে প্রস্ফূটিত হোক; কিন্তু তাকে যেন ভুলভাবে মূল্যায়ন করে মেধাবী বা ‘অ-মেধাবী’ বানিয়ে দেওয়া না হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হতে যে যোগ্যতা প্রয়োজন, আসন সংখ্যার তুলনায় শতগুণ বেশি শিক্ষার্থী সেই যোগ্যতা ধারণ করে। সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রকৃতপক্ষে এমনভাবে পরীক্ষা নিতে হয় যাতে যোগ্য শিক্ষার্থী বাছাই করার পড়ে না; বরং হাজার হাজার যোগ্যের মধ্য থেকে অধিকাংশকেই কীভাবে বাদ দেওয়া যায়, সেটিই মূখ্য হয়ে দাঁড়ায়।
তার মানে, এটি আসলে এক বৃত্তাকার কু-চক্র– যেখানে এসএসসি ও এইচএসসিতে ভালো পারফর্ম করায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ভর্তি হতে এসে শিক্ষার্থীদের বাদ পড়ার প্রতিযোগিতায় নামতে হয়। আবার ভর্তিপরীক্ষায় বাদ পড়ার কারণে শিক্ষার্থীর এসএসসি বা এইচএসসির কৃতিত্ব শেষ পর্যন্ত অবমূল্যায়িতই হয় এবং তাদেরকে অনেকের কাছে মেধাহীন হিসেবে চিহ্নিত হতে হয়।
এর সমাধান কী? প্রতিবার ভর্তি পরীক্ষার পর শিক্ষার্থীদের ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পেলেই তুমি মেধাহীন নও’– ধরনের বাক্য বলে স্বান্ত্বনা দেওয়া? নাকি এর বাইরে কিছু করার আছে?
আছে তো অবশ্যই; তবে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা যেহেতু কেন্দ্রীভূত, সমাধানের প্রচেষ্টাও তাই কেন্দ্র থেকে শুরু হতে হবে। এই মুহূর্তে আলাদাভাবে এর সমাধান সম্ভব নয়। এদেশের প্রতিটি পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থা আলাদা– প্রাথমিকের সঙ্গে সংযোগ নেই মাধ্যমিকের। মাধ্যমিকের সঙ্গে উচ্চমাধ্যমিক কিংবা উচ্চশিক্ষাস্তরের অর্থপূর্ণ সংযোগ অনুপস্থিত। শিক্ষা ব্যবস্থাপনা থেকে মূল্যায়ন– সবক্ষেত্রেই এক অবস্থা। কেবল শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকের ক্ষেত্রে উল্লম্ব ও আনুভূমিক কিছু যোগসূত্র থাকতে হয় বলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে কিছুটা ধারাবাহিকতা রয়েছে, উচ্চশিক্ষায় সেটিও নেই।
এ অবস্থায় শিক্ষার প্রতিটি পর্যায়ে মূল্যায়ন ব্যবস্থা এমনভাবে গড়ে তোলা প্রয়োজন যেন আগের পর্বের মূল্যায়ন পরবর্তী পর্বে সহায়ক ভূমিকা রাখে। মূল্যায়ন লেখাপড়ার বাইরের কিছু নয়। এটি এমন নয় যে, লেখাপড়া শেষ হওয়ার পরেই কেবল শিক্ষার্থীকে মূল্যায়ন করতে হবে। মূল্যায়ন লেখাপড়ার একটি আবশ্যকীয় পর্ব যেখানে শিক্ষার্থীরা নিজেদের ভুল শুধরে পরবর্তী স্তরের জন্য নিজেকে তৈরি করতে পারে।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় মূল্যায়নের এই প্রধান বৈশিষ্ট্যই অনুপস্থিত। অনুপস্থিত বলেই শিক্ষার্থীদের মেধাবী বা মেধাহীন তকমা দেওয়ার প্রচেষ্টা সেখানে যতটা, তাদের অন্তর্নিহিত যোগ্যতা বের করে আনার কৌশল ততটাই দুর্বল। প্রচলিত পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের কার্যকর মূল্যায়নে সমর্থ নয়। প্রাক-প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কতটা কার্যকরভাবে মূল্যায়ন করা যায়, সেই পদ্ধতি দ্রুত বের করে তা বাস্তবায়ন করা উচিত।
কোনো শিক্ষার্থীই আসলে মেধাহীন নয়। ব্যর্থতা রয়েছে মেধা-যাচাইয়ের পদ্ধতিতে, ব্যর্থতা রয়েছে শিক্ষার্থীর ভেতরকার শক্তিশালী দিকগুলো বিকশিত করার প্রচলিত পদ্ধতিতে। সুতরাং যথাযোগ্য উপায়ে মূল্যায়নের পদ্ধতি স্থির না করে কোনো পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার কারণে তাদের তিরস্কার করা বা মেধা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা নিন্দনীয় হওয়া উচিত।
পাশাপাশি, তাদের যথাযথভাবে মূল্যায়ন না করতে পারার জন্য লজ্জিত হওয়া উচিত আমাদের, যারা মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত রয়েছি নানাভাবে, নানাপর্যায়ে।
লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছে বিডিনিউজ২৪.কম-এর মতামত বিশ্লেষণ বিভাগে। মূল লেখার লিংক এখানে।