১.
বাংলাদেশের সর্বশেষ শিক্ষাক্রমে (curriculum) ‘ধর্মশিক্ষা’ বিষয়টি পরিবর্তিত হয়ে ‘ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা’ হওয়ার পর একজন ধর্ম-শিক্ষক জানতে চেয়েছিলেন, “এই পরিবর্তন কতটুকু প্রয়োজনীয় ছিল? আমরা কি তাহলে এতদিন ধর্মশিক্ষার সঙ্গে নৈতিক শিক্ষা দিইনি?”
উত্তরে বলেছিলাম, “শিক্ষাক্রমের এ পরিবর্তন এসেছে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর নির্দেশনা অনুসারে। সেখানে ‘ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা’ অধ্যায়ে ধর্মের সঙ্গে নৈতিক শিক্ষাকে যুক্ত করার একটি ব্যাখ্যা পাওয়া যায়, ‘…ধর্মশিক্ষা যাতে শুধু আনুষ্ঠানিক আচার পালনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে চরিত্র গঠনে সহায়ক হয় সেদিকে নজর দেওয়া’ (জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০, পৃ. ২০)। সেখানে এটিও বলা আছে, ‘নৈতিকতার মৌলিক উৎস ধর্ম। তবে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যসমূহ এবং দেশজ আবহও গুরুত্বপূর্ণ উৎস। নৈতিকতা শিক্ষার ক্ষেত্রে এ সকল বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করে নৈতিক শিক্ষাদান পদ্ধতি নির্ধারণ করা হবে’ (জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০, পৃ. ২১)।’’
প্রশ্নকারী শিক্ষককে আরও বলেছিলাম, “জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি হয়তো মনে করেছে, ধর্ম ও অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে নৈতিকতাকে জুড়ে দিলে আমাদের বর্তমান নৈতিক স্তরের উন্নতি হবে।”
এ রকম নানা আলোচনার পর সেই শিক্ষক একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছিলেন, “আমাদের নৈতিক মান যে হারে নিচে নামছে, তাতে শুধু পড়ালেখার মাধ্যমে নৈতিকতা বাড়ানো একটি দুরূহ বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। সমাজের প্রতিটি স্তরে আমরা নানাভাবে অনৈতিকতার চর্চা করছি। এটি এখন এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, শুধু পড়ালেখার মাধ্যমে তা দূর করা খুব কঠিন বিষয় হবে।”
নৈতিক শিক্ষা নিয়ে চিন্তিত এই শিক্ষকের উপর্যুক্ত কথাটি নানা কারণে মনে রাখতে হয়েছে। লক্ষণীয়, আজ থেকে শত বছর আগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জগদীশচন্দ্র বসু প্রমুখ মনীষীও ঠিক একই ধরনের কথা বলে গেছেন। শিক্ষা নিয়ে রচিত বিভিন্ন প্রবন্ধে সমাজের অব্যাহত নৈতিকতার পতন, যথাযথ শিক্ষার অভাব, শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুতি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তাঁরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
বর্তমান সমাজের চিত্রের সঙ্গে তাঁদের এতদিন আগের আক্ষেপগুলো তুলনা করলে হতবাক হতে হয়– বিশেষত নৈতিকতা বা এ ধরনের বিষয় নিয়ে। আজকের দিনের অবস্থা দেখলে তাঁরা কী লিখতেন?
২.
প্রশ্নপত্র ফাঁস এখন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নৈতিকতা-অনৈতিকতার বালাই নেই, প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে শুনলে পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা ছুটছেন একসেট প্রশ্ন যোগাড়ের আশায়। পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের এ ক্ষেত্রে দোষ দেওয়া যুক্তিসঙ্গত কিনা, সে প্রশ্ন অবশ্য অনেকে তুলতে পারেন।
কারণ আজকের দিনে শিক্ষার্থীরা কতটুকু শিখছে তা যতটা গুরুত্বপূর্ণ, তার চাইতে হাজারগুণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষার্থীরা ক’টি বিষয়ে এ প্লাস পাচ্ছে। সব বিষয়ে এ প্লাস পেয়েও যেখানে শিক্ষার্থীকে পছন্দমতো কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে তারা সুযোগ পেলে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র যোগাড় করতে চাইবেই। ভালো ফলাফল না হলে কোথাও কদর পাওয়া যায় না, চাকরি-বাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে থাকতে হবে পেছনের সারিতে।
উপরন্তু, যেখানে প্রায় সবাই ‘ভালো’ রেজাল্ট করছে, ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র যোগাড় করে একটু কম পড়ে যদি ‘খুব ভালো’ ফলাফল করা যায়, তাহলে তাতে কে নৈতিকতা-অনৈতিকতা খুঁজতে যাবে? যারা খুঁজতে যাবে, তাদের সংখ্যা দিন দিন কমছে বলেই মনে হচ্ছে।
প্রশ্নপত্র কীভাবে ফাঁস হয় এবং এসবের সঙ্গে কারা জড়িত? উত্তর জানা নেই; কিন্তু এটুকু জানা আছে যে, প্রশ্নপত্র তৈরি থেকে পরীক্ষার হলে পৌঁছানো পর্যন্ত সর্বোচ্চ গোপনীয়তা বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়। আর এর মধ্যেও যখন প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যায়, তখন তা ‘বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো’র কথাই মনে করিয়ে দেয়।
অতীতে বহুবার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। দোষী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার জন্য নানা জায়গায় অভিযানও চালানো হয়েছিল একাধিকবার। প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে কারও কি কখনও কোনো সাজা হয়েছিল?
সরকারি ও গুরুত্বপূর্ণ নানা পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপানো হয় বিজি প্রেস থেকে। ওখান থেকে প্রশ্ন বাইরে আসার খবরও এসেছিল পত্রিকায়। এ ব্যাপারে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল? সাধারণ মানুষের প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার ‘হ্যাডম’ নেই। যারা এসব বিষয়ে সুদক্ষ, যারা জানে যে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে কীভাবে নিরাপদে নিজেদের রক্ষা করা যায়– তাদেরই এসব কাজে জড়িত থাকার কথা।
তাছাড়া প্রশ্নপত্র তৈরি থেকে পরীক্ষার হলে আসার পূর্ব পর্যন্ত গোপনীয়তা বজায় রাখার ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন ব্যক্তি দায়িত্ব পালন করেন। এদের মধ্য থেকে কোন স্তরে ফাঁস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, ফাঁস হলে সেটা কীভাবে হতে পারে– তদন্ত করে এসব বিষয় বের করা কি খুবই কঠিন কাজ?
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা সময়ে কঠিন কঠিন কাজও অনেক সুনিপুণভাবে সম্পন্ন করেছে। তাদেরকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিলে তারা এসব বিষয়ের রহস্য বের করতে পারবেন না– তা ভাবাটা কষ্টকর।
তবে তারও আগে যে কাজটুকু করা প্রয়োজন তা হল, প্রশ্নপত্র যে ফাঁস হয় এবং হচ্ছে, সেটি স্বীকার করে নেওয়া। স্বীকার না করলে এটি যে একটি অ্যালার্মিং সমস্যা, তাই তো স্বীকৃত হয় না! অন্য অনেক সময়ের মতো এবারও এইচএসসি পরীক্ষায় পদার্থ বিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার পর দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা তা স্বীকার করতে চাননি। তাদের অনেকে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রকে সাজেশন মনে করেন। অথচ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল তাঁর সাম্প্রতিক এক কলামে পরিস্কারভাবে দেখিয়েছেন, পরীক্ষার আগে তিনি এক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে যে প্রশ্ন পেয়েছেন, তার সঙ্গে পরীক্ষায় আসা প্রশ্নপত্রের মিল প্রায় হুবহু।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে যারা সরাসরি জড়িত, তাদের কাজ চূড়ান্ত রকমের অনৈতিক– এ নিয়ে কেউ তর্ক করতে আসবে না। যেসব পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র যোগাড় করতে যান, তাদের অবস্থানও শেষ বিচারে অনৈতিক। কিন্তু যারা ফাঁস হওয়ার পরও স্বীকার করতে চান না যে, প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে– নৈতিকতার বিচারে তাদের অবস্থান ঠিক কোথায়?
প্রশ্নপত্র যদি আগের রাতে ফাঁস হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ হয়তো পরদিন পরীক্ষা শুরুর সময় পর্যন্ত ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র মিলিয়ে দেখার জন্য অপেক্ষা করতে পারেন। কিন্তু যে প্রশ্নপত্র দু-তিনদিন আগেই ফাঁস হয়ে যায়, তার ব্যাপারে কি আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না? প্রশ্নপত্র তৈরির সঙ্গে জড়িত কিছু মানুষের তো অন্তত জানার কথা যে, সংশ্লিষ্ট পরীক্ষায় কী প্রশ্ন এসেছে এবং বাজারে পাওয়া প্রশ্নের সঙ্গের এর মিল কতটুকু?
দুঃখজনকভাবে পদার্থ বিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্রের ফাঁস হওয়া প্রশ্নগুলোকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান সাজেশন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন! সাজেশনের চল একসময় ছিল বটে। আমরা যখন এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছি, তখন টেস্ট পরীক্ষার পরপরই বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির সাজেশন বই পাওয়া যেত। এর মধ্যে কোনো কোনো কোম্পানির বইতে প্রশ্নের পাশে সেই প্রশ্নটি পরীক্ষার আসার সম্ভাবনা কতটুকু তার শতকরা হিসাবও দেওয়া থাকত। সেসব সাজেশনের অনেক কিছুই মিলত, অনেক কিছুই মিলত না– তবে শতভাগ মিলে যাওয়ার কথা কখনও শুনিনি।
অপরদিকে, ওই সময়ের পরীক্ষার ধারা অনুসারে কোন বছরের পরীক্ষায় কোন প্রশ্ন আসতে পারে, তা আন্দাজ করা খুব একটা কঠিন কাজও ছিল না। আগের বছরের প্রশ্ন পরের বছর আসবে না– এটা প্রায় স্বতঃসিদ্ধ ছিল। তেমনি তারও আগের বছরের প্রশ্ন থেকে অনেক কিছুই আসবে– তাও ধরে নেওয়া হত। আর সাজেশন বইতে দশটা প্রশ্ন দেওয়া থাকলে তার মধ্য থেকে একাধিক কমন পড়ার সম্ভাবনা তো সবসময়ই থাকে।
এতসবের পরও শতভাগ মিলে যাওয়া সাজেশনের সন্ধান পাইনি আমরা। আর এখন হুবহু মিলে যাওয়া জিনিসকে যখন সাজেশন বলে চিহ্নিত করা হয়, তখন হতাশ হতে হয়। তাও না হয় ধরে নিলাম, কিন্তু পদার্থ বিজ্ঞান প্রথম পত্রের প্রশ্ন তো সৃজনশীল পদ্ধতিতে করার কথা। আর সৃজনশীল পদ্ধতিতে কী প্রশ্ন আসবে, প্রশ্ন কোন ফরম্যাটে থাকবে এবং প্রশ্নের ধরন কী হবে– তা তো কারও জানার কথা না! তাহলে এসব সৃজনশীল প্রশ্নের ক্ষেত্রেও প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ কেন উঠবে?
‘সাজেশন’ তৈরিকারীরা কি এতই সৃজনশীল যে, তারা সৃজনশীল প্রশ্নেরও সাজেশন তৈরি করতে পারেন? যদি সত্যি সত্যিই কোনো ব্যক্তি এমনই দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন এবং টাইম ট্রাভেলার হয়ে যান যে, তার তৈরি করা সাজেশন পরবর্তীকালে মূল পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে সঙ্গে হুবহু মিলে যায়, সে ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তিকে (কিংবা ব্যক্তিবর্গকে) জাতীয় সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করা উচিত। তাদেরকে নানা কাজে লাগানো যাবে।
উদ্বেগের ব্যাপার হল, ফেসবুকের মতো উন্মুক্ত জায়গায় অনেকে ঘোষণা দিয়ে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র বিলি করছে। তারা সদম্ভে নিজেদেরকে প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী হিসেবে চিহ্নিত করছে। কিছু কিছু গ্রুপে রীতিমতো এসব বিষয়ে ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে। এই সাহস তারা পাচ্ছে কোত্থেকে?
ফেসবুকের ছোটখাট ঘটনা নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে যায়,; আর এত বড় অপরাধকে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সামলাচ্ছে না কেন?
৩.
নৈতিকতার যে প্রসঙ্গ দিয়ে লেখাটি শুরু হয়েছিল সেখানেই ফিরে যাই আবার। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার পরিধি এতটাই বিশাল যে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে যারা সরাসরি জড়িত, তাদের সংখ্যা অনেক দেশের মোট জনসংখ্যারও বেশি। ফলে এদেশে পাবলিক পরীক্ষার নানা কাজকর্ম সুচারুভাবে সম্পন্ন করা কতটা ঝক্কির কাজ তা অনেকে ধারণাও করতে পারবেন না।
কিন্তু তাই বলে তো এসব বিষয়ে ন্যূনতম শিথিলতা বা উদাসীনতা প্রদর্শনের সুযোগ নেই। দুদিন আগে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের বিষয়ে সঙ্গে সঙ্গেই কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত ছিল না?
প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা একটা-দুটো হলে ঘটনাকে দুর্ঘটনা বলে উপেক্ষা করা যায়; কিন্তু নিয়মিত বিরতিতে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনাকে সংঘবদ্ধ অপরাধ ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের বাইরের মানুষ হওয়ার সম্ভাবনা কম। সুতরাং যারা প্রশ্নপত্র তৈরি বা বিতরণের নানা পর্যায়ের সঙ্গে যুক্ত, তাদের মধ্যকার কিছু মানুষের নৈতিকতার পতন ঘটেছে, জোরালো তদন্তের মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করতে হবে। একই সঙ্গে নৈতিকভাবে দৃঢ় মানুষদের এসব কাজে যুক্ত করা উচিত।
পাশাপাশি, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনাসমূহ এবং এর সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সামাজিকভাবে নিন্দনীয় বিবেচনা করে বয়কট করা প্রয়োজন। ধর্ম-শিক্ষক যে রকমটি বলছিলেন– একা বিদ্যালয়-ব্যবস্থা ও শিক্ষাব্যবস্থার পক্ষে এ ধরনের অপরাধ সামলানো খুব কঠিন– যদি না সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে এর সঙ্গে যুক্ত করা যায়।
প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার খবর শুনেই যেসব পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক তা সংগ্রহ করতে ছুটে যান, তাদেরকে উপলব্ধি করানো উচিত যে, ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র সংগ্রহের মাধ্যমে তারা তাদের সন্তানদের সরাসরি অনৈতিকতার শিক্ষা দিচ্ছেন। যারা প্রশ্নপত্র বিক্রি করছে, সমাজের অন্যদের উচিত হবে এদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সোপর্দ করা।
আমরা আশা করব, সরকার, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দৃঢ়ভাবে এ অপরাধের মূলোৎপাটন করবেন। পাশাপাশি, সমাজের দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে এ ধরনের অপরাধকে প্রশ্রয় দেওয়া বা উৎসাহিত না করার বিষয়েও আমাদেরকে প্রতিজ্ঞ হতে হবে। এর জন্য বেশি কিছু করতে হয় না; ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের পেছনে না ছুটলেই কিন্তু অনেকটা কাজ হয়ে যায়।
দিন যাচ্ছে, বাড়ছে সাক্ষর ব্যক্তির সংখ্যা, বাড়ছে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষিত মানুষের সংখ্যাও। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যদি অনৈতিকতার চর্চাও বাড়ে, তাহলে বলতে হবে, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা দিনদিন অনেককে দক্ষ করে তুলছে ঠিকই, কিন্তু তা মানুষ বানানোর কারিগর হিসেবে অসফল।
নৈতিকতার শিক্ষাটুকু কীভাবে মানুষের মধ্যে সঞ্চারিত করা যায়, তার জন্য প্রধান উদ্যোগ নিতে হবে শিক্ষাব্যবস্থাকেই। এ জন্য সমাজের প্রতিটি মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে সমানতালে।
* লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে বিডিনিউজের মতামত বিভাগে ২৯ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে।