আঙ্গুল-কিবোর্ড অভিমান!
অনেকদিন ব্লগ লেখা হয় না। বিষয়টা এমন না যে, ব্লগ লিখে অনেক কিছু করে ফেলছি। কিংবা ব্লগে লিখে দুনিয়াকে উল্টাতে না পারলেও অন্তত কিছুটা সুড়সুড়ি দিতে পারছি। মাঝেমাঝে এমনও মনে হয়, মানুষ নিজের সুখের জন্য যেমন বিকেল বেলা চা খেতে খেতে কান চুলকায়, আমার ব্লগ লেখাটাও তেমনি। এতে কানের একটু আরাম হয় সত্যি, কিন্তু অন্যের তো দূরের কথা, নিজের কানের কোনো উপকার হয় না- বরং মাঝখান থেকে কটনবাড কেনাবাবদ কয়েকটা পয়সা লস! এই লেখালেখি না করতে পারাটাকে অনেকে কাব্যিকভাবে ‘রাইটার্স ব্লক’ বলে- আমার ক্ষেত্রে আবার সেটাও সত্যি না- কারণ ব্লগে না লিখলে নানা কারণে নানাভাবে নানাকিছু লিখেই যাচ্ছি। রাবিশ রাবিশ রাবিশ অসংখ্য রাবিশ লিখে একসময় উপলব্ধি হয়- রাবিশ লেখালেখিই সম্ভবত আমার যোগ্যতা- কারও কারও ক্ষেত্রে রাবিশ বলাটা অবশ্য তাদের যোগ্যতা। মাঝে মাঝে অবশ্য হালকা বাতাসের মতো কাব্যিক চিন্তা পাতলা চুলের ফাঁক দিয়ে তালুতে/টাকে আঘাত করে- কোনো কারণে কি আঙ্গুল আর কিবোর্ডের মাঝখানে অভিমান বা দ্বৈরথজাতীয় ঘটনা ঘটেছে?
প্রজন্মান্তরের সমস্যা?
সেদিন গুলশান ২-এর ওয়েস্টিন হোটেলের পেছনে দাঁড়িয়ে চা খেতে দুই পথকিশোরের ঝগড়া শুনছিলাম। বিষয়বস্তু হচ্ছে- কোন এলাকায় কে যাবে? কী উদ্দেশ্যে সেটা অবশ্য ঝগড়া থেকে পরিষ্কার না, তবে ঝগড়াটা হাতাহাতি যেহেতু না, আশেপাশে চা-খোররা মেটাবার কোনো উদ্যোগই নিচ্ছে না। বরং উপভোগই করছে। মিনিট পাঁচেক ঝগড়ার পর অকস্মাৎই শুরু হলো হাতাহাতি- এক কিশোর আরেক কিশোরকে নাকি তার মাকে নিয়ে কী বলেছে। কী বলেছে? চা-খোররা এগিয়ে গেলাম মীমাংসা করতে। জানা গেল- এতোক্ষণ ঝগড়াটা টক-শো মুডে চললেও যেই না একজন বলেছে- তোর মা তো বাসায় বাসায় গিয়ে বুয়ার কাজ করে- অমনি অপরজন তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তার মতে, মাকে নিয়ে খারাপ কথা বলবে কেন? মীমাংসাকারীরা বুঝতে পারে না- এতে খারাপের কী হলো! শুরু থেকেই অবশ্য মীমাংসাকারীরা দুটো ভাগে বিভক্ত ছিল- অ্যাকটিভ আর প্যাসিভ। অ্যাকটিভ মীমাংসাকারীরা দুজনকেই চড়-থাপ্পড় দিয়ে দুদিকে সরিয়ে দেয়। একজন প্যাসিভ মীমাংসাকারী হিসেবে আমার মনে কিছু চিন্তা খেলে যায়।
রাস্তাঘাটে নানান ঝগড়া দেখেছি। সেখানে প্রচুর অশ্রাব্য গালাগালি থাকে- সে তুলনায় এখানে কোনো গালাগালিই হয় নি। তাহলে ওই কিশোরটা খেপে গেল কেন? কেন যেন মনে হলো, প্রত্যেক মানুষেরই নিজের মা-বাবাকে নিয়ে একটা আলাদা অনুভূতির জায়গা থাকে- যদি মা-বাবা কোনো কারণে সন্তানের কাছে খারাপও হয়- তবুও। এই অনুভূতিটা প্রকৃতিগত, অচ্ছেদ্য। যে কিশোর মাকে তুলে কথা বলেছে, সে কোন উদ্দেশ্য নিয়ে কথাটা বলেছে পরিষ্কার নয়;-তার ইনটেনশন কিংবা বলার ধরনটা কি অপমানজনক বা আপত্তিজনক ছিল? হয়তোবা। মা-বাবার সাথে সন্তানদের প্রজন্মের গ্যাপ থাকে- অনেকক্ষেত্রে মিল হয়ই না- কিন্তু দিনশেষে মা-বাবা মানে মা-বাবাই- তা নিজের হোক কিংবা অন্যের মা-বাবাই হোক। তাঁদেরকে উদ্দেশ্য করে অপমানসূচকভাবে কথা বললে কোন মানুষটা সহ্য করতে পারবে? কেন যেন মনে হয়, শিক্ষিত সন্তানদের চেয়ে ‘অশিক্ষিত’ সন্তানরাই মা-বাবাকে বুঝে বেশি, বুঝার চেষ্টাটা করে বেশি। শিক্ষিতরাই বরং নানাকৌশলে নিজের এবং অন্যের মা-বাবাকে হেয় করে, করতে পারে। জেনারালাইজড চিন্তাভাবনা অবশ্যই, কিন্তু পূর্বপ্রজন্মকে বুঝতে চেষ্টা করার একটা দায় উত্তরপ্রজন্মকে নিতে হয়- পূর্বপ্রজন্মকে দোষারোপ করার মধ্যে, হেয় করার মধ্যে কোনো কৃতিত্ব নেই। উত্তরপ্রজন্ম অনেক অন্তঃসারশূন্যতা ঢাকতে চায় পূর্বপ্রজন্মের ওপর দোষ চাপিয়ে। সেদিনের পর থেকে ওই দোকানটাতে প্রায়ই যাই চা খেতে, উদ্দেশ্যে সেই কিশোরটাকে পাকড়াও করা, অন্তত তার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলার জন্য। বড় হয়ে তার মাকে নিয়ে কী কী করবে, মাকে তার পরিকল্পনা কী ইত্যাদি ইত্যাদি- যদিও জানি না একজন অপরিচিতকে সে কতোটুকু পাত্তা দিবে।
শ্রীলেদার্স
২০১১ সালের জানুয়ারিতে ইন্ডিয়া গিয়েছিলাম। ফেরার পথে কলকাতার শ্রীলেদার্স থেকে একজোড়া জুতা আর কিছু মোজা কিনলাম। জুতার দাম নিয়েছে সম্ভবত ৬৫০ রুপি। আমি আমার জীবনে যতো জুতা কিনেছি- এই জুতাজোড়ার মতো এতো ভালো জুতা কখনো পাই নি। এই প্রথম জুতা পড়ে আমার পা কাটে নি। বৃষ্টি-রোদ-শীত- প্রায় প্রতিদিনই জুতাগুলো পড়ছি, একজোড়া জুতার ওপর যে পরিমাণ প্রেসার দেয়া সম্ভব- তার পুরোটুকু দেয়ার পরও এখনও কালি করলে প্রায় নতুনের মতোই দেখায়। এর পরেরবার ইন্ডিয়া গেলে আর কিছু কিনা বা না কিনি- নিজের জন্য কয়েকজোড়া জুতা নিয়ে আসবো শ্রীলেদার্স থেকে।
দস্যু মোহন
ছোটবেলায় আনুপিসির (বাবার পিসাতো বোন) কাছে পড়তে যেতাম- আমার আপন ছোট পিসি আর আমি একই ক্লাসে পড়তাম- মূলত তারই ন্যাওটা হয়ে পিছন পিছন গিয়ে আনুপিসির বাসায় আমিও প্রাইভেট পড়তাম। আনুপিসির ঘরে একটা ছোটখাটো লাইব্রেরির মতো ছিল- একদিন খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে গেলাম দস্যু মোহন আর দস্যু বনহুর সিরিজ। তখন সিক্স কিংবা সেভেনে পড়ি- প্রাইভেট পড়া বাদ দিয়ে গোগ্রাসে বইগুলো গিলতে লাগলাম। প্রথম দুদিন দেখার পর আনুপিসি নিজেই প্রাইভেট পড়ার রুমের থেকে আমার টুল সরিয়ে বইয়ের তাকের সামনে রেখে দিলেন। অবস্থা এমন হলো- মাঝেমাঝে বই শেষ না করে আর উঠতাম না। ছোট পিসি প্রাইভেট শেষ করে বাসায় চলে যেত, আমি ধীরেসুস্থে বইপড়া শেষ করে দুপুরে খেয়েদেয়ে বাসায় ফিরতাম।
সেদিন হঠাৎ করেই দস্যু মোহন অমনিবাসের লিংক পেয়ে গেলাম। অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাদ দিয়ে আবারও সেই পুরনো দিনের মতো গিলছি এখন। প্রায় শেষের পথে। মাঝখানে উত্তেজনা একটু ঝিমিয়ে গেলেও দস্যু মোহন সেই পুরনোরূপেই হাজির হয়েছে আমার কাছে- যে কিনা প্রথম জীবনে দস্যু থেকে পরবর্তী জীবনে ডিটেকটিভ বনে যায়!
খালি হাত আর বুদ্ধি দিয়ে প্রতিপক্ষকে পরাজিত করার কৌশলগুলো দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। এখন প্রযুক্তি আর অস্ত্রের জয়জয়কার।
সামাজিক যোগাযোগ
মানুষকে অসামাজিক করার সমস্ত উপাদান বিদ্যমান সামাজক যোগাযোগের ওয়েব সাইটগুলোতে।