স্মৃতি শুধু সাদামাটা প্রতারণাই করে না; মারাত্মকভাবেও প্রতারণা করে।
গতকালের শোনা কথায় বইমেলায় কার কার সাথে দেখা হলো, কী আলোচনা হলো তার একটি বিতং বর্ণনা দিয়েছি। কিন্তু বইমেলা থেকে চলে আসার আগে রাসেল ভাইয়ের সাথে যে দেখা হলো, তা কী করে যেন বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম। রাসেল ভাইয়ের সাথে আলাপ হলো টুকটাক, সাথে ভাবী ছিলেন। কিন্তু পুরো ঘটনাটা কী করে যেন মনেই আসেনি লেখাটি তৈরি করার সময়। মনে পড়লো আজ দুপুরে- ঘুম থেকে উঠা পর। এ সময়ে হঠাৎ করে মনে পড়ার কোনোই কারণ নেই, কিন্তু যে রহস্যজনক কারণে ভুলে গিয়েছিলাম, ঠিক সেই রহস্যজনকভাবেই আবার এটি মনে পড়ে গেল।
আজকে বইমেলা যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। রাতের ট্রেনে যাচ্ছি রাজশাহী- ভাবলাম বিকেলবেলা ঢু মারা যাবে। কিন্তু বিকেলেই চলে এলেন কয়েকজন অতিথি। ফলে যাওয়া আর হলো না। গতকাল অবশ্য শান্ত ভাইয়ের সাথে কথা হচ্ছিল এ নিয়ে- তিনি বললেন, রাতের ভ্রমণ- ধুলাবালি খেয়ে সারারাত ভ্রমণ করার চেয়ে কিছুটা বিশ্রাম নেয়া ভালো। তাঁর কথা একদিক দিয়ে ঠিক- কিন্তু বইমেলার জন্য আকুলিবিকুলিটা তার চেয়েও বড় হয়ে দেখা দেয়।
বইমেলা আসলে পত্রিকাগুলোয় বিজ্ঞাপনের পরিমাণ বেড়ে যায়। মজার মজার বিজ্ঞাপনও আসে অনেক। গতকাল পত্রিকায় নতুন বইয়ের বিজ্ঞাপনগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলাম। কেন যেন মনে হলো, নিজের বইয়ের ব্যাপারে মানুষজন অত্যাধিক ক্রেজি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দৃষ্টিকটুও মনে হয়। বড় বড় লেখকরা যখন হাভাতের মতো বিজ্ঞাপন দিতে থাকেন, তখন কেন যেন একটু লজ্জ্বাই লাগে! যাই হোক, যার বিজ্ঞাপন দেবার মতো টাকা আছে, তিনি তো বিজ্ঞাপন দিবেনই। একজন বিজ্ঞাপনদাতা (মানে লেখক নিজে) তার চেয়ে ভালো লেখকদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। ভালো লেখকের সংজ্ঞাটা অবশ্য পরিষ্কার করেন নি, তবে ধরে নিতে পারি, সারাবছর তিনি যে পরিমাণ লিখেন, তার চেয়ে বেশি পরিমাণ লেখিয়েদেরকেই তিনি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। কারণ, তিনি সারাবছর ধরে লিখেন, প্রচুর লিখেন। সম্ভবত সব্যসাচী লেখক, মানে দুই হাতেই একটানা লিখতে পারেন। কিন্তু বিভিন্ন পত্রিকার ঈদ সংখ্যায় তার কয়েকটা লেখা দেখে তিনি কেন যে লেখেন, সেটা আজও আমার কাছে পরিষ্কার হয় নি।
আজকের পত্রিকার বিজ্ঞাপনেও দেখলাম- বইমেলা উপলক্ষ্যে প্রচুর বই প্রকাশিত হচ্ছে। আমার ব্যক্তিগত আগ্রহ প্রবন্ধ ও গবেষণার প্রতি। সেরকম বইয়ের বিজ্ঞাপন তুলনামূলকভাবে কম। মানুষজন দেদারসে গল্প-কবিতা-উপন্যাস লিখে যাচ্ছে। প্রবন্ধ কিংবা গবেষণার বইও প্রকাশ হচ্ছে প্রচুর- কিন্তু সে তুলনায় বিজ্ঞাপন নেই। গল্প-কবিতা-উপন্যাসের বিজ্ঞাপন বেশি কেন? কোনো উত্তর বের করতে পারছি না। আপনাদের কী মনে হয়?
হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে মাতামাতি হবে এ বছর- স্বাভাবিকভাবেই। বইয়ের বিজ্ঞাপনগুলোতে তাই দেখছিলাম- হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে কেউ কিছু লিখেছেন কিনা। লিখলে কী লিখেছেন? হুমায়ূন আহমেদের প্রচুর ভক্ত আছেন- তারা লিখেন প্রশংসাবাণী। হুমায়ূন আহমেদের প্রচুর সমালোচনাকারী আছেন- তারা লিখেন নিন্দাবাক্য। মাঝখান থেকে দাড়িয়ে হুমায়ূন আহমেদকে দেখাটা কি জরুরি? নাকি মাঝখানে থেকে দেখাটা নেহায়েতই একটি নির্বোধ আইডিয়া! হয়তো এ ধরনের বই ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু নামটা জানা নাই। পরের শুক্রবার বইমেলায় যাওয়ার ইচ্ছে আছে, যদি সেরকম কোনো বই পাই- হয়তো কিনে ফেলবো। সমস্যা হলো, শুক্রবারে গিয়ে বই দেখা যায় না, দুএকটা লাইন পড়া যায় না, বাছবিছার করা যায় না। এতো ভিড়ের মাঝখানে দুদণ্ড শান্তিতে বইকেনার সুযোগটা শুক্র ও শনিবার ছাড়া অন্যান্য দিনে প্রবল- কিন্তু সে আমার ভাগ্যে নেই!
এসব বিজ্ঞাপন দেখতে দেখতেই ভাবছিলাম- বইমেলায় কতো বই আসে? হিসাবটা কীভাবে করা হয়? বাংলা একাডেমী যদিও প্রতি বছর একটা হিসাব দেয়; কিন্তু সেটা কতোটুকু ঠিক? দেশ তো এখন ডিজিটাল হচ্ছে। মেলার তথ্যকেন্দ্র ছাড়াও প্রতিটা স্টল তাদের স্টলের এক কোণায় যদি একটা স্ক্রিন রেখে দিতে তাহলে বোধহয় ভালো হতো। সেখানে নতুন বই, কয়টা বই আসলো, বইয়ের প্রচ্ছদ, এমনকি সাহস থাকলে কত কপি ছাপা হলো আর কত কপি বিক্রি হলো সেই হিসাবটা দিতে পারে। মানুষজনের অনেক কৌতুহল মিটে তাতে, অনেক তথ্য পাওয়াও যাবে সহজে। ডিজিটাল বাংলাদেশে এটুকু হয়তো আশা করাই যায়!
বইমেলায় ‘আমরা বন্ধু’র অনেক ব্লগারদের বই আসছে। কিন্তু এ নিয়ে কোনো পোস্ট নেই। প্রথম পাতায়ই দেখতে পাচ্ছি অপূর্ব সোহাগ, তানবীরা আপার নতুন বইয়ের খবর। ব্লগ কর্তৃপক্ষ কি পারে না একটা স্টিকি পোস্ট করতে যেখানে এই ব্লগের ব্লগারদের আসা নতুন বইয়ের নামধাম সব থাকবে? পাশাপাশি বইয়ের প্রচ্ছদগুলো যদি স্লাইডের মাধ্যমে প্রদর্শন করা যায়, তাহলে তো দারুণ হয়।
বিষয়টা ভাববেন নাকি কর্তৃপক্ষ? এখনও সময় আছে।