(ডিসক্লেইমার: মিরসরাইয়ে দুর্ঘটনার পর ক্ষোভে-রাগে দুটো লেখা লিখেছিলাম। একটি প্রকাশিত হয়েছে আমরা বন্ধুতে, বাকিটা পাঠিয়েছিলাম একটা বিখ্যাত জায়গায়। তারা ছাপে নি। অনুরোধ করেছিলাম না ছাপালে অন্তত জানাতে। তারা সেই অনুরোধটুকুও রাখে নি। এতোদিনেও যেহেতু ছাপে নি, ধরে নিচ্ছি তারা আর ছাপবে না। অপ্রকাশিত এই লেখাটি এতোদিন পর প্রকাশ করা উচিত কিনা, বিলম্বিত প্রতিক্রিয়ার আদৌ কোনো মূল্য আছে কি না জানি না, তারপরও দিলাম। কেন, তা জানি না। বোধহয় নিজের রাগটুকু অন্যকে জানানোর একটা আকাঙ্ক্ষা খুব বেশি করে কাজ করছে নিজের মধ্যে।)
মিরসরাইয়ে দুর্ঘটনায় প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থী (বা তারও বেশি) মারা যাওয়ার পর তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। খবর অনুসারে, ট্রাকের চালকের বদলে গাড়ি চালাচ্ছিল চালকের সহকারী যে গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা বলছিল। গাড়ির গতি ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। একপর্যায়ে ট্রাকটি ব্রিজ থেকে নামার সময় উল্টো দিক থেকে আসা একটি ‘ভটভটি’ বা ‘নছিমন’কে সাইড দিতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের ডোবায় পড়ে যায়। ট্রাক ডোবার আগে চালক ট্রাক থেকে নেমে পড়ে এবং পালিয়ে যায়। চালক ধরা পড়েছি সম্প্রতি।
পত্রিকাগুলো মূলত বেঁচে যাওয়া শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে এই তথ্যগুলো দিয়েছে। তদন্ত কমিটি যেহেতু গঠিত হয়েছে, সেহেতু ‘আশা করতে পারি’ দ্রুত তদন্ত হবে এবং তদন্ত অনুসারে এই দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার হবে। এটি একটি দিকের চিত্র। অন্য দিকের চিত্র হচ্ছে, দুর্ঘটনা যেহেতু বাংলাদেশে একটি স্বাভাবিক ঘটনা, সেহেতু অন্য অনেক দুর্ঘটনার মতো এটির কথাও আমরা দ্রুত ভুলে যাবো এবং ব্যস্ত হয়ে পড়বো অন্য আরো নতুন ঘটনা বা দুর্ঘটনা নিয়ে। শুধু যে পরিবারের মানুষগুলো মারা গেছে, তারা বছরের পর বছর ধরে দুর্ঘটনার শিকার এই শিশুকিশোরদের স্মৃতি হাতড়ে নিদারুণ কষ্ট ভোগ করবে। এই দুর্ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক কিংবা ইন্টারনেট মিডিয়াতে নানা কথা হচ্ছে, চলছে বিশ্লেষণ। এরই অংশ হিসেবে আমিও কিছু প্রশ্ন তুলতে চাই; তবে উত্তর কোত্থেকে আসবে তা আমার জানা নেই।
প্রশ্ন ক: ট্রাক কি মানুষ আনা-নেওয়ার বাহন?
ট্রাক, পিকআপ বা এ ধরনের পণ্যবাহী বাহনে মানুষ আনা-নেওয়া হরহামেশাই হচ্ছে। রাতের শেষ দিকে বা ভোরে কারওয়ান বাজারে গেলে উত্তরবঙ্গগামী প্রচুর নিম্নআয়ের মানুষকে রাতের ট্রাকে করে বাড়ি যেতে বা আসতে দেখা যায়। নিম্নআয়ের মানুষজনের অনেককিছুই মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্তের আলোচনায় আসে, কিন্তু তাদের যাতায়াত-প্রক্রিয়া এখনো পত্রিকা বা টেলিভিশনের মূল আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠতে পারে নি। ফলে তারা ট্রাকে নাকি বাসের ছাদে মালের বস্তার মতো আসা-যাওয়া করলো- সেগুলো আসলে নানা বিচারে এখনো গুরুত্বহীন। পথচলতি কোনো মানুষের মনে হয়তো ট্রাকে মালের মতো চলা মানুষ দেখে কিঞ্চিৎ প্রশ্ন উদয় হতে পারে, কিন্তু সেই প্রশ্ন দুকদম হাঁটার পরে হয়তো মিলিয়ে যাওয়া আরো স্বাভাবিক।
ট্রাক মানুষ আনার বাহন কিনা মিরসরাইয়ের দুর্ঘটনার পর প্রশ্নটি আবার নতুন করে তোলা দরকার, এবং জোরালোভাবে। যারা শিক্ষার্থীদেরকে ট্রাকে তুলে দিয়েছেন, তাদের কি একবারও এই প্রশ্নটি মনে হয় নি? যারা শিক্ষার্থীদের ট্রাকে উঠতে দেখেছেন, তাদের মনে প্রশ্নটি জাগে নি? যে ট্রাকচালক শিক্ষার্থীদের ট্রাকে উঠিয়েছে, তার কি মনে হয় নি ট্রাকটি শুধু পণ্য পরিবহনের জন্য তার হাতে দেওয়া হয়েছে? আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কারো সামনে দিয়ে যদি ট্রাকটি গিয়ে থাকে (অন্তত ঢাকা থেকে কিছু মানুষ ট্রাকে করে উত্তরবঙ্গে যায় এবং আসে, সেগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তো দেখেই), তাদের কি কিছু মনে হয় না এ ব্যাপারে? এই ধরনের যাতায়াতের ব্যাপারে তারা কি নিয়মিত ব্যবস্থা নেয়? এনসাইক্লোপিডিয়াতে নানা ধরনের প্রশ্নের উত্তর থাকে, কিন্তু ট্রাক মানুষ আনা-নেওয়ার বাহন কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর কোন এনসাইক্লোপিডিয়াতে পাওয়া যাবে?
প্রশ্ন খ: শিক্ষার্থীদের খেলা দেখতে যাবার অনুমতি ছিল না কেন?
পত্রিকার খবর অনুসারে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের খেলা দেখতে যাবার অনুমতি ছিল না যদিও মিরসরাই স্টেডিয়ামে ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট’-এর খেলোয়াড় ছিল শিক্ষার্থীরাই। একাধিক বিদ্যালয়ের মধ্যে যখন কোনো খেলা অনুষ্ঠিত হয় (সেটি যে খেলাই হোক না কেন), স্বাভাবিকভাবে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ থাকে সেই খেলাটি দেখার। আন্তবিদ্যালয় ফুটবল বা অ্যাথলেটিক টুর্নামেন্ট এখন চালু আছে কিনা জানি না, কিন্তু আমাদের সময়ে প্রতিবছর এ ধরনের টুর্নামেন্ট হতো এবং আমরা সবাই দলবেধে সেই খেলা দেখতে যেতাম। আন্তবিদ্যালয় অ্যাথলেটিক প্রতিযোগিতা হতো দিনব্যাপী এবং সেদিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকতো। অপরদিকে ফুটবল টুর্নামেন্টে যেদিন খেলা থাকতো, সেদিন বিদ্যালয় টিফিন সময়ের পর বন্ধ হয়ে যেতো। এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে শিক্ষার্থীদের ফুটবল খেলা দেখতে যাবার অনুমতি ছিল না কেন? অনুমতি থাকলে হয়তো শিক্ষকরা দায়িত্ব মনে করেই শিক্ষার্থীদের আনা-নেওয়ার ব্যবস্থা করতেন এবং শিক্ষার্থীদের ক্লাশ ফাঁকি দিয়ে ট্রাকে যাতায়াত করতে হয় না। যে খেলা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে, সেই খেলার দর্শক হিসেবে শিক্ষার্থীদের কেন বঞ্চিত রাখার ব্যবস্থা করা হলো? স্বাভাবিক সময়ে (বিকেলে) খেলার ব্যবস্থা না করে কেন ক্লাশ সময়ে খেলার ব্যবস্থা করা হলো? দুর্ঘটনার সাথে এই প্রশ্নগুলোকে আপাত-সামঞ্জস্যহীন বলে মনে হতে পারে, কিন্তু ব্যবস্থাপনাগত দিক দিয়ে বিচার করলে এসব প্রশ্নে লুকিয়ে থাকে দুর্ঘটনার কিছু পরোক্ষ কারণ।
প্রশ্ন গ: আবেগ শুধু মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য?
মারা যাওয়ার পর সব মৃত শিক্ষার্থীই মেধাবী হয়ে যায়, অন্তত পত্রিকার পাতা কিংবা বক্তৃতায়। সেটা ঠিক আছে, কারণ আমাদের ভালোবাসার প্রকাশভঙ্গি প্রায়শই আবেগমণ্ডিত। কিন্তু যখন একাধিক শিক্ষার্থী একসাথে মারা যায় এবং শিক্ষক মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য আক্ষেপ আর আহাজারি করেন “দুর্ঘটনা বেছে বেছে আমার মেধাবী ছাত্রগুলো নিয়ে গেল” কিংবা “অমুক অমুক অমুক আর অমুক মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল, তারা থাকলে দেশকে কিছু দিতে পারতো” বলে, তখন পুরো বিষয়টাকে নির্মম মনে হয়। মিরসরাই দুর্ঘটনায় রোল নম্বর বিচারে ‘মেধাবী’ ও ‘অমেধাবী’ উভয় ধরনের শিক্ষার্থীই মারা গেছে। এটা ঠিক, মেধাবী শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের নজর কাড়ে, হয়তোবা তাদের প্রতি শিক্ষকদের দরদ বা ভালোবাসা থাকে বেশি। শিক্ষক ক্লাশের প্রথম সারির শিক্ষার্থীদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেন (যদিও উল্টোটা করাই প্রয়োজন), কিন্তু একাধিক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর শুধু মেধাবী শিক্ষার্থীদের নিয়ে কথা বলাটা বিসদৃশ বলেই মনে হয়। মনে হয়, শিক্ষকদের আবেগ শুধুই মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য। এই আবেগ যদি যাকে মেধাবী শিক্ষার্থী বলা হচ্ছে, শুধু তার পিতামাতা বা স্বজনদের সামনে দেখানো হয়, তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু যখনই পাবলিক ফোরামে, পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে কিংবা প্রকাশ্যে এই আবেগ দেখানো হয়, তখন ‘অমেধাবী’ শিক্ষার্থীদের পিতামাতা বা স্বজনদের সেটি শুনতে কেমন লাগে? এভাবে বলাটা কতোটুকু রুচিসম্মত? তখন শোকের পরিবেশে রুচিহীন হলেও প্রশ্নটা করতেই হয়- শিক্ষকদের আবেগ কি শুধু মেধাবী শিক্ষকদের জন্য?
প্রশ্ন ঘ: এর নাম কি দায়িত্বপালন?
যদিও সাধারণ শিক্ষার্থীদের খেলা দেখতে যাবার অনুমতি ছিল না, কিন্তু তাদের অনেকেই পিটি সেরে ক্লাশ না করে স্টেডিয়ামে চলে যায়। শিক্ষকরা তখন কী করছিলেন? আশেপাশে কোথাও খেলা থাকলে, শিক্ষার্থীরা তা দেখতে যেতে চাইবে- এটাই স্বাভাবিক। আর খেলাটা নিজ বিদ্যালয়ের হলে তো কথাই নেই। বিডিনিউজ লিখেছে, “আবু তোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাফর সাদিক জানালেন,এই এলাকাটি খেলাপ্রিয়। সবাই খেলা পাগল। সকালে অনেক ছেলে স্কুলে এসে পিটি শেষে ক্লাস না করেই চলে যায়”। তো এই কথাগুলো প্রধান শিক্ষকের মাথায় আগে ছিল না? অন্য শিক্ষকরা কী করছিলেন? শিক্ষকরা কি তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন? যারা আয়োজক, তারা বিদ্যালয় সময়ে কেন শিক্ষার্থীদের নিয়ে খেলার আয়োজন করেছিলেন? কেন তারা শিক্ষার্থীদের আনানেয়ার দায়িত্বটা ঠিকমতো পালন করলেন না? শিক্ষার্থীদের আসা ও যাওয়ার জন্য ট্রাকের ব্যবস্থা যে ‘স্থানীয় মেম্বার’ করে করে দিয়েছিলেন, তিনি কি দায়িত্বশীল মেম্বারের মতো আচরণ করেছেন? যে শিক্ষকরা খেলা দেখতে মাঠে গিয়েছিলেন, তারা কি শিক্ষার্থীদের বাড়ি ফেরার কথা কিছু ভেবেছিলেন? প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই উত্তর নেতিবাচক। সেক্ষেত্রে প্রশ্নটা দাড়ায়- কর্তব্যের কথা বাদ দিলাম, সংশ্লিষ্ট এতোগুলো মানুষ কি তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন?
এটি কি দুর্ঘটনা নাকি হত্যার শামিল ঘটনা
দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া এবং হত্যা- দুটোর ফলাফল একই হলেও প্রক্রিয়াগত পার্থক্য বিশাল ও ব্যাপক। মিরসরাইয়ের ঘটনাটিকে যদিও দুর্ঘটনা বলা হচ্ছে, কিন্তু নানা বিষয় বিবেচনা করলে একে হত্যার শামিল একটি ঘটনা ছাড়া আর কিছু বলা উচিত বলে মনে করি না। এখানে হত্যাকারী কে সেই প্রশ্ন উহ্য।
দুর্ঘটনা কখন ঘটে? যখন সমস্ত কন্ডিশন ঠিক থাকে, সবকিছু নিয়ম অনুযায়ী চলে কিন্তু দৈবদুর্বিপাক বা অস্বাভাবিকভাবে উদ্ভুত সমস্যা কারণে স্বাভাবিকতা বিনষ্ট হয়ে ক্ষয়ক্ষতি ঘটে তখনই তাকে দুর্ঘটনা বলা যায়। অনিচ্ছাকৃত ভুলের কারণে ঘটিত দুর্ঘটনাকেও দুর্ঘটনা হিসেবে স্বীকার করে নেয়া যায়। এখন আসুন দেখি এটিকে দুর্ঘটনা বলা যায় কিনা।
ক. খেলার সময় ফেলা হয়েছে বিদ্যালয় চলাকালীন এবং সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের ব্যবস্থা রাখা হয় নি। ফলে ক্লাশ পালিয়ে শিক্ষার্থীদের খেলা দেখতে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি করা হয়েছে।
খ. শিক্ষার্থীরা পালিয়ে গিয়ে খেলা দেখতে পারে, এই সম্ভাব্য ঝুঁকির কথা চিন্তা করা হয় নি। ফলে পিটি ক্লাশে অংশ নিলেও পরে তাদের আর ক্লাশে দেখা যায় নি।
গ. শিক্ষকরা খেলার মাঠে অনেক শিক্ষার্থীকে আসতে দেখেছেন, কিন্তু তারা কীভাবে বাড়ি ফিরবে সেই বিষয়টি নিয়ে তারা কোনো চিন্তা করেন নি।
ঘ. পণ্য পরিবহনের বাহনে শিশুকিশোরদের বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিষিদ্ধ এই কাজটি ঘটতে অনেকেই দেখেছেন। কোনো প্রতিবাদ হয় নি।
ঙ. অননুমোদিত এবং বিপদজনক ‘ভটভটি’ বা ‘নছিমন’ রাস্তায় চলাচল করেছে। কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় নি।
চ. চালকের বদলে গাড়ি চালাচ্ছিল চালকের সহকারী। গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা বলা নিষিদ্ধ হলেও সে কথা বলছিল। শিক্ষার্থীদের আপত্তিতে কান দেয় নি।
ছ. আয়োজকরা দেখেছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খেলা দেখতে এসেছে। তারা কীভাবে বাড়িতে ফিরবে, সে বিষয়ে আয়োজকদের কোনো উদ্যোগ দেখা যায় নি।
জ. শিক্ষার্থী যখন বিদ্যালয়ে আসে তখন তার অভিভাবক হন বিদ্যালয়ের শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের যাবতীয় দেখাশোনার দায়িত্ব তাদের। এমনকি বিদ্যালয়ের বাইরেও (এমনকি সে বিদ্যালয় থেকে পালিয়ে গেলেও) শিক্ষার্থীর দেখাশোনার নৈতিক দায়িত্ব শিক্ষককে বহন করতে হয়। সেই দায়িত্বের শিক্ষকদের পালন করতে দেখা যায় নি।
উপর্যুক্ত প্রতিটি পয়েন্টের সাথেই দুর্ঘটনা সংঘটিত হওয়ার কারণ বিদ্যমান। উপরের যে কাজগুলো কথা বলা হয়েছে, সাধারণ এবং স্বাভাবিক দায়িত্ববোধ থাকলে এর কোনোটাই হওয়ার কথা ছিল না; আর হয়েছে বলেই এরকম একটা দুর্ঘটনা ঘটতে পেরেছে। এ অবস্থায় এটাকে হত্যা না বলে দুর্ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত করা কতোটুকু সমীচীন? কাউকে সরাসরি আঘাত করে মেরে ফেলাটাই শুধু হত্যা নয়, তিলে তিলে কিংবা ধাপে ধাপে স্বাভাবিকত্ব বিনষ্ট করে হত্যার যাবতীয় কন্ডিশন সৃষ্টি করাটাও হত্যারই শামিল বলে মনে করি।
*
যতো আলোচনাই হোক না কেন, তদন্ত কমিটি যে রিপোর্টই দিক না কেন, আমরা এটাকে হত্যা বা দুর্ঘটনা যা-ই বলি না কেন, এই সন্তানগুলো আর ফিরে আসবে না। এই পিতামাতারা বাকি জীবনটা কাটাবেন বুকের ভেতরকার অসহনীয় ওজনের চাপা পাথর নিয়ে। আমাদের হয়তো আপাতভাবে কিছুই করার নেই; কিন্তু নিয়ম না মানার বল্গাহীন প্রতিযোগিতা এবং দায়িত্ব সম্পাদনে যে সীমাহীন উদাসীনতা আমাদের মধ্যে রয়েছে- সেই জায়গাটিতে আমরা কি কিছুই করতে পারি না? এতোগুলো মৃত্যু তো প্রমাণ করে দিল- কী পরিমাণ গাফিলতি থাকলে এরকম একটা দুর্ঘটনা ঘটা সম্ভব।
Leave a Reply